
সিডিসির একজন বিশেষজ্ঞ মায়োকারডাইটিস এবং পেরিকারডাইটিস সংক্রান্ত তথ্যর উপর ভিত্তি করে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন যে কোভিড-১৯’র টিকা গ্রহনের পর তরুনদের মধ্যে হৃদযন্ত্র ফুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যা কিনা একটি বিরল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
সিডিসির ইমুনাইজেশন সেইফটি অফিসের উপ পরিচালক টম শিমাবুকুরো এফডিএ কে টিকা সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদানকারী বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নিকট তথ্য উপস্থাপনকালে বলেন এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াটি বয়স্ক নর নারীর চেয়ে কিশোর এবং তরুনদের মধ্যে বেশী দেখা যাচ্ছে এবং এটি প্রতি ১০ লাখ মানুষ যারা করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন তাদের ১৬ জনের মধ্যে প্রতীয়মান হচ্ছে।
এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে বুকে ব্যথা, শ্বাস কষ্ট এবং জ্বর।
নাশভিলের ভ্যনডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির সংক্রামকব্যধী বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম সাফনার মনে করেন “একটি বিরল কিন্তু সত্যিকারের” সংকেতের বেশকিছু বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথমত এই ঘটনাগুলো টিকা নেয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যে গুচ্ছাকারে ঘটছে। দ্বিতীয়ত এ ধরনের ঘটনা পুরুষ এবং অল্পবয়স্কদের মধ্যে বেশী দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন তৃতীয়ত এই ঘটনাগুলো তথাকথিত ব্যাকগ্রাউন্ড রেট’র উরধে এবং টিকা না গ্রহন করলেও এ বয়সী মানুষদের মধ্যে দেখা যাওয়ার কথা নয়।
তিনি বলেন “আমি মনে করি না আমরা এখনও চূড়ান্ত কোন পর্যায়ে পৌঁছেছি। আমরা এ সকল ঘটনার উপর কোন নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও সংগ্রহীত তথ্য থেকে আমার মনে হয় আমরা আমাদের লক্ষ্যের দিকেই যাচ্ছি।
মায়োকারডাইটিসের ঘটনাগুলো অতিমাত্রায় টিকার সাথে সম্পৃক্ত এগুলো শিশুদের উপর টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সবুজ সংকেত প্রদানের জন্য বায়োলজিকাল প্রোডাক্টস এডভাইজরি কমিটির প্রয়োজনীয় তথ্যের সাথেও সম্পৃক্ত।
শিশুদের মধ্যে কোভিডের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা অনেকটা কম হওয়াতে কেউ কেউ মনে করেন বর্তমানে জরুরী ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২ মাসের তথ্য সংগ্রহের চেয়ে এফডিএর উচিত ক্লিনিকাল ট্রায়ালে টিকা নিয়ে অন্তত এক বছর গবেষণা করা যাতে করে অনুমোদনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা যায়। আবার অনেকে মনে করেন টিকা সংক্রান্ত ঝুঁকি যত কম হউক না কেনো সেটি এই বয়সের সাথে সম্পৃক্ত সুবিধাসমূহকে ম্লান করে দিতে পারে।
কমিটির সদস্য ও ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অফ হেলথের পরিচালক মাইকেল কুরিল্লা বলেন “আমি মনে করি না শিশুদের টিকা প্রদান করা খুব বেশী জরুরী”। তবে, কুরিল্লা বলেন অতি মাত্রায় ঝুকিতে থাকা শিশুদের নিয়ে একটি সম্প্রসারিত কর্মসূচী সহায়ক হতে পারে।
বয়সে তরুন বেশীরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক যাদের মায়োকারডাইটিস হয়েছিল তাঁরা দ্রুত সেরে উঠেন যদিও তাঁদের মধ্যে তিনজনের নিবিড় পরিচর্যা এবং পুনর্বাসনের প্রয়োজন হয়েছিল। এ সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর মধ্যে ৮১% সুস্থ হয়েছেন এবং ১৯% এখনও কিছু উপসর্গ রয়েছে।
কয়েকটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা
মায়োকারডাইটিস সম্পর্কিত তথ্যগুলো পাওয়া যায় ভিএইআরএস অর্থাৎ টিকা সংক্রান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা জানান দেয় এমন একটি ব্যবস্থা হতে। সকলের কাছে উন্মুক্ত এই ব্যবস্থাটির রয়েছে সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা। এর মাধ্যমে সিডিসি এবং এফডিএ দ্রুততার সাথে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো শনাক্ত করতে পারে এবং বিশালতার কারনে এটি শনাক্ত করতে পারে বিভিন্ন বিরল ঘটনাকে যা কিনা বিশাল পরিসরের ক্লিনিকাল ট্রায়ালেও শনাক্ত করা যায় না।
তবে, এই ব্যবস্থাটি পর্যবেক্ষণের অধীনে থাকার কারনে এটি বোঝার উপায় নেই যে সমস্যাগুলো কি টিকার কারনে হয়েছে নাকি নিছক কাকতলীয়।
যেহেতো ভিএইআরএস হনার সিস্টেমের উপর কাজ করে তাই এটিকে স্প্যাম করা যায় এবং স্বাস্থ্যকর্মী হতে আরম্ভ করে রোগীরদের পক্ষপাতমূলক মতামত এখানে রয়েছে। এ কারনে সীমাবুকুরু বলেন তাঁরা প্রাপ্ত প্রতিটি ঘটনা তদন্তের পর নিশ্চিত করছেন।
১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রয়োগকৃত প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ডোজের মধ্যে সিডিসির কাছে হৃদযন্ত্রে প্রদাহের ২৭৫ টি ঘটনার প্রতিবেদন রয়েছে। সিডিসি টিকা গ্রহনের পর ভিএইআরএস থেকে প্রাপ্ত ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে মোট ৪৭৫ টি মায়োকারডাইটিসের ঘটনার বিশ্লেষণ করেছে।
এ জাতীয় ঘটনাগুলোর সাথে সম্পৃক্ত টিকাগুলো ফাইজার এবং মডারনার প্রস্তুতকৃত এমআরএনএ টিকা। একমাত্র ফাইজারের টিকাকেই বর্তমানে কিশোরদের উপর প্রয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে। যেহেতো মাত্র গত মাসে ১২ বছরের শিশুদের উপর ফাইজারের টিকা প্রয়োগের অনুমতি দেয়া হয় তাই ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মায়োকারডাইটিসের ঝুঁকি নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
এখন পর্যন্ত মোট প্রয়োগকৃত টিকার মাত্র ৯% পেয়েছে কম বয়সীরা কিন্তু এ সকল কম বয়সী টিকা গ্রহনের পর মায়োকারডাই
টিসে আক্রান্তদের প্রায় ৫০%। শিমাবুকুরো বলেন এ ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কারভাবেই ভারসম্যহীনতা রয়েছে।
তিনি বলেন এই বয়সের মানুষদের মধ্যে টিকা গ্রহনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ঘটনাগুলো টিকা না নেয়া সমবয়সীদের চেয়ে বেশী এবং এটির সংখ্যা ইসরাইলে টিকা নেয়ার পর ঘটনাগুলোর সাথে অনেকটাই এক রকম। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে ইসরাইলে টিকা গ্রহনের পর মায়োকারডাইটিসের ঘটনার হার প্রতি দশ লাখে ৫০টি।
আরো গবেষণার প্রয়োজন
ভ্যাকসিন সেইফটি ডাটালিংকের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনগুলোতেসাধারন্ সময়ের চেয়ে অধিক সংখ্যায় হৃদযন্ত্রের প্রদাহের প্রমান পাওয়া যায়নি তবে এই প্রতিবেদনগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে টিকার দ্বিতীয় ডোজের পর প্রদাহের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
বোস্টনের টাফস ইউনিভার্সিটির নবজাতক সংক্রমন বিশেষজ্ঞ এবং এফডিএ কমিটির একজন সদস্য কোডি মেইজনার জানতে চেয়েছিলেন “এই তথ্য কি সম্মতিপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত?”
তিনি বলেন “আমার মনে হয় মায়োকারডাইটিস সংক্রান্ত কিছু ঘটনা ঘটতে পারে এমনটি অস্বীকার করা বেশ কঠিন বটে”।
পরবর্তীতে কমিটির এক সভায় মেইজনার বলেন যে তাঁর হাসপাতালে সম্প্রতি একটি ১২ বছরের বালককে ভর্তি করা হয়েছিল যার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর হৃদপিন্ড ফুলে যায় এবং তাঁর রক্তে ট্রোপনিন নামক এক ধরনের এনজাইমের উপস্থিতি বেশ অধিক মাত্রায় পাওয়া যায় এবং এর মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি অনুমান করা হয়। উক্ত বালকের শরীরে ট্রোপনিনের মাত্রা ছিল ৯ এর উপর যা মেইজনারের ভাষায় “অত্যন্ত বেশী”।
তিনি বলেন “মায়োকারডিয়াম কি আতংকের কারন হবে? পরবর্তীতে কী আরিদমিয়ার প্রবণতা থাকবে? হৃদযন্ত্র কী অকেজো হতে পারে? আমরা মনে করি এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা কম কিন্তু আমরা এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা পোষণ করি না।“
আগামী সপ্তাহে সিডিসি টিকাদান কার্যক্রমে নজরদারির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে নিযুক্ত করতে একটি জরুরী সভার আহবান করেছে।
এফডিএ’র বৈঠকে পরিবেশিত তথ্যের পাশাপাশি ওরেগন হেলথ এন্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির চিকিৎসকেরা সম্প্রতি ফাইজের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর ৪ দিনের মধ্যে কিশোরদের মধ্যে হৃদযন্ত্রের প্রদাহের সাতটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
উক্ত গবেষণাটি বৃহস্পতিবার পেডিয়াট্রিক্স নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়। সবগুলো কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং এনএসএইড ও স্টেরোয়েডসহ প্রদাহ বিরোধী ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এদের বেশীরভাগকে কয়েক দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং তাদের উপসর্গ নিরাময় হয়।