
জারিন তাহসিন আনজুম
প্রাচীনকাল থেকেই খাবার ও ওষুধ হিসেবে বিবেচিত সুপেয়, মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ হল মধু। পরিশোধিত চিনির পরিবর্তে মধু বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। তরল মধু নষ্ট হয় না কারণ মধুতে ব্যক্টেরিয়া বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। এক টেবিল চামচ মধুতে ৬৪ ক্যালরি, ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ, ম্যাল্টোজ ও সুক্রোজসহ ১৭ গ্রাম সুগার বিদ্যমান। এতে কার্যত কোনো ফাইবার, চর্বি বা প্রোটিন নেই। এতে অল্প পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, আয়োডিন, জিংক ও কপার সহ অন্যান্য খনিজ, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান আছে। এছাড়াও মধুতে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস রয়েছে।
মধুর যেসব স্বাস্থ্য গুণাগুণ রয়েছে তা হলঃ
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যঃ টাইপ-২ রোগীদের সাধারণ কিছু হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে মধু। উদাহরণস্বরূপ, মধু খারাপ কোলেস্টেরল ‘LDL’, ট্রাইগ্লিসারাইড ও প্রদাহ কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল ‘HDL’ এর মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। মধু টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ ইনসুলিন প্রতিরোধেও সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মধুও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে তবে পরিশোধিত চিনির চেয়ে বেশি নয়। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের জন্য এটি সতর্কতার সাথে খাওয়া উচিত।
- উচ্চ রক্তচাপ কমানোঃ মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে। ফলে উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে।
- মধু পোড়া ও ক্ষত নিরাময়কারিঃ গবেষণায় দেখা যায়, সার্জারির পর সংক্রামিত ক্ষত নিরাময়ে মধু সবচেয়ে কার্যকর। ডায়াবেটিক রোগীদের পায়ের ক্ষতগুলো গুরতর জটিলতা ধারণ করতে পারে। এগুলো সারাতেও মধু কার্যকর। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব এবং ক্ষতের চারপাশের টিস্যুগুলোকে পুষ্ট করার ক্ষমতার ফলে মধু নিরাময় শক্তিসম্পন্ন। এমনকি সোরিয়াসিস ও হার্পিসের মত ক্ষতসহ ত্বকের অন্যান্য চিকিৎসায় মধুর অসাধারণ গুণ রয়েছে।
- কাশির সমস্যা দূর করাঃ শ্বসন অঙ্গের ইনফেকশনের ফলে কাশি হওয়া শিশুদের একটি সাধারণ সমস্যা। এক্ষেত্রে মধু অনেকসময় ওষুধের থেকেও ভালো কাজ করে এবং কাশির লক্ষণগুলো হ্রাস করে। পাশাপাশি ঘুমেরও উন্নতিসাধন করে। তবে বটুলিজমের কারণে এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মধু দেওয়া উচিত নয়।
- কোলেস্টেরলের সঠিক মাত্রাঃ উচ্চ এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা হার্টের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ৫৫ রোগীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, মধু এলডিএলের মাত্রা ৫.৮% হ্রাস করে এবং এইচডিএল কোলেস্টেরলের ৩.৩% বৃদ্ধি ঘটায়। এর ফলে ১.৩% ওজন হ্রাসও হয়েছিল। একাধিক গবেষণায় দেখা যায়, চিনির পরিবর্তে মধু সেবনের ফলে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমে যায়। তাই মধু কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
সূত্রঃ হেলথ লাইন